ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিকের ১৫ দিনেও মুক্তি মেলেনি। কবে মুক্তি মিলবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ। মুক্তির সংবাদ শোনার অধীর অপেক্ষায় আছেন জিম্মি নাবিকদের স্বজনরা। প্রতিদিন নাবিকদের স্বজনরা ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন জাহাজটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের কাছে।

এ বিষয়ে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নাবিকদের দ্রুত জিম্মিদশা থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি নাবিকরা যাতে ঈদের আগে মুক্তি পান। আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি। নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দস্যুদের সঙ্গেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।’

আবদুল্লাহ জাহাজে জিম্মি ওয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শ্যালক শামসুদ্দিন রবিবার রাতে ফোন করে জানিয়েছে তারা সুস্থ আছে। সমস্যা হচ্ছে পানি নিয়ে। জাহাজের স্বাদু পানির লাইন চালু করা হচ্ছে সপ্তাহে মাত্র দুবার। তাও ঘণ্টাখানেকের জন্য। বাকি সময় ব্যবহারের জন্য নিতে হচ্ছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি। লবণাক্ত পানি ব্যবহারে কারও কারও শরীরে অ্যালার্জিসহ চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে জাহাজে এক ইংরেজি জানা লোক যোগ দিয়েছে দস্যুদের সঙ্গে। ধারণা করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে জাহাজমালিকের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।’

এদিকে, দস্যুদের পক্ষ থেকে গত ২০ মার্চ দুপুরে জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর দস্যুদের সঙ্গে জাহাজমালিকের বেশ কয়েক দফা যোগাযোগ হয়। তবে দস্যুরা কত টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে সে বিষয়ে মালিকপক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। মুক্তিপণ নিয়ে দস্যুদের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি।

সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজ মালিক জাহাজে কমান্ডো অপারেশনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের যুদ্ধজাহাজগুলো এমভি আবদুল্লাহ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে। এখনও দিনে ১-২ বার হেলিকপ্টার এসে রাউন্ড দিয়ে যাচ্ছে৷ তবে জাহাজে জলদস্যুরা বিমান বিধ্বংসী কামান বসিয়ে রেখেছে। জাহাজে শুধুই জরুরি রুটিন কাজগুলো করার সুযোগ পাচ্ছেন নাবিকরা। বিশেষ করে, ইঞ্জিন রুমে।’

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’।